ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-১

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৫ এএম | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৫ এএম

মানুষের এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষ কত কিছুরই তো নিশ্চয়তা দেয়। তিন মাস ছয় মাস থেকে শুরু করে পাঁচ-দশ-বিশ বছরের সেবার নিশ্চয়তাও দেয়া হয় বিভিন্ন পণ্যে। মানুষের জীবনযাত্রা যতো উন্নত হচ্ছে, এ নিশ্চয়তার পরিমাণও ততো বাড়ছে। কিন্তু মানুষ কি কখনো জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পেরেছে? এমনকি জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে?

সূর্যের আলোর মতোই স্পষ্ট কথা হলো- মানুষের জীবন ও মৃত্যু নিয়ে কেউ কখনোই কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। কে কতদিন বেঁচে থাকবে- এটা যেমন কখনো কারো পক্ষে বলে দেয়া সম্ভব হয়নি, তেমনি গুরুতর অসুস্থ কাউকে দেখে সে কখন এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে- এটাও সুনিশ্চিত করে বলতে পারেনি কেউ। যা কিছু বলা হয় সবটাই অনুমাননির্ভর। এ অনুমান কখনো টেকে, কখনো টেকে না।

আর কথা কি, জীবনযাত্রা ও বিজ্ঞানের উন্নতির পথ ধরে মানুষের নিজের তৈরি পণ্যে নিশ্চয়তা প্রদান যেভাবে বাড়ছে, মানুষের নিজের জীবন যেন ততটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। আকস্মিক মৃত্যু কত রূপ নিয়ে এখন আমাদের সামনে হাজির হয়! অবশেষে কথা তো একটাই- ‘যখন তাদের নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয় তখন তারা আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং এর চেয়ে একটু এগিয়েও আসতে পারে না।’ (সূরা ইউনুসÑ৪৯)

এ তো গেল জীবন-মৃত্যুর কথা। কিন্তু এ জীবনের শেষ পর্যন্তও যে সুখে-সাচ্ছন্দ্যে কাটবে, আরাম-আয়েশে কাটবে এরই বা নিশ্চয়তা কোথায়! ‘নদীর এপার ভাঙে ওপার গড়ে এই তো নদীর খেলা/সকালবেলার ধনী রে তুই ফকির সন্ধ্যাবেলা’- এ তো রূপকথার কোনো গল্প নয়, বরং আমাদের চারপাশে ঘটতে থাকা বাস্তবতা।
সামান্য সময়ের ব্যবধানে সারাজীবনের উপার্জন হারিয়ে সহায়-সম্বল অর্থবিত্ত সব হারিয়ে কতজন নিঃস্ব হয়ে যায়! চোখের পলকে আকস্মিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা হাত-পা হারিয়েছে, কিংবা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ আহত হয়েছে, তাদের অবস্থাও তো একই রকম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এমন বিপদ থেকে হেফাজত করুন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাতটি বিষয়ের পূর্বে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো।’

তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সবকিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদেরকে দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সে সবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত কি না সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত? (জামে তিরমিযীÑ২৩০৬)

এই হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের উপরোক্ত বাস্তবতাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। মানুষ যে কোনো মুহূর্তে চরম সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে, কিংবা ঐশ্বর্যের ধাক্কায় সে অহঙ্কারী ও অবাধ্য হয়ে পড়তে পারে, তার সুস্থ দেহটি যে কোনো সময়ই অসুস্থতায় আক্রান্ত হতে পারে, বার্ধক্যের আঘাতে হারিয়ে যেতে পারে যৌবনের শক্তি-সামর্থ্য, অকস্মাৎ থাবা বিস্তার করতে পারে মৃত্যু, নেমে আসতে পারে দাজ্জালের ফেতনা কিংবা কিয়ামত।

তাই নেক কাজের জন্য কোনো অপেক্ষা নয়। হাদিসের শিক্ষা হচ্ছে- যখন তুমি যে অবস্থাতেই থাক, সাধ্যমতো নেক কাজ করতে থাক। অবস্থা পরিবর্তনের অপেক্ষায় থেকে সময় পার করে দিও না। আজ যে সচ্ছল, পকেটভর্তি যার টাকা-পয়সা, সে ভাবতে পারে- হাতে তো টাকা আছেই, যে কোনো সময় চাইলেই তো দানসদকা করা যাবে, অকাতরে বিলিয়ে দেয়া যাবে অর্থকড়ি। এখন তাড়াহুড়োর কী আছে? কিন্তু এ নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে কোথায়- আজ হাতে যে অর্থসম্পদ রয়েছে, তা চিরদিনই থেকে যাবে?

এ নিশ্চয়তা দেয়া তো কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাহলে হাতে টাকা-পয়সা থাকার পরও, দানসদকা করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরও আগামীকালের অপেক্ষায় আজকের দিনটি পার করে দেয়া কি দরিদ্রতা ও সঙ্কটের মুখে পড়ার অপেক্ষা নয়? সে সঙ্কটের আঘাতের তীব্রতায় হয়তো তুমি আল্লাহর কথাই ভুলে যাবে? দানের প্রশ্ন তো তখন বলাই বাহুল্য। তখন আক্ষেপ আর অনুশোচনা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা থাকবে না।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জালেমের সামনে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন যারা
জালেমের সহযোগী-সমর্থকও জালেম
আল কুরআনে মানব হত্যার শাস্তি-২
আল-কুরআনে মানবহত্যার শাস্তি-১
মুমিন কখনো বেপরোয়া হয় না-২
আরও

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জে সীমান্তজুড়ে কঠোর অবস্থানে বিজিবি

সুনামগঞ্জে সীমান্তজুড়ে কঠোর অবস্থানে বিজিবি

শামি-বুমরাহকে নিয়েই ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল

শামি-বুমরাহকে নিয়েই ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল

ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ

ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের ১৩তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন রবিবার

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের ১৩তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন রবিবার

কমলনগরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত ৩

কমলনগরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত ৩

কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির ১২টি ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা

কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির ১২টি ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা

তারাকান্দায় বাসের ধাক্কায় আহত-৪

তারাকান্দায় বাসের ধাক্কায় আহত-৪

কুয়েটে অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল আইডিয়া কেস কম্পিটিশন ‘বিজব্যাটেল’

কুয়েটে অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল আইডিয়া কেস কম্পিটিশন ‘বিজব্যাটেল’

ভারতের ড্রেসিংরুম চ্যাপেল যুগের মতো বিধ্বস্ত: হরভজন

ভারতের ড্রেসিংরুম চ্যাপেল যুগের মতো বিধ্বস্ত: হরভজন

জুনে জাফর-২ ও পায়া উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ইরান

জুনে জাফর-২ ও পায়া উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ইরান

আন্দোলনের ইমেজ বিশ্বকে জানাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আন্দোলনের ইমেজ বিশ্বকে জানাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত

দুই যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ৪ সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে- গ্রেপ্তার- ১

দুই যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ৪ সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে- গ্রেপ্তার- ১

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি শুরু

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি শুরু

শুরু হয়েছে 'শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ সিজন–২ এর রেজিষ্ট্রেশন; কি থাকবে এবারের পর্বে?

শুরু হয়েছে 'শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ সিজন–২ এর রেজিষ্ট্রেশন; কি থাকবে এবারের পর্বে?

‘২০ বছরের অধিক সাজাখাটা বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিন’

‘২০ বছরের অধিক সাজাখাটা বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিন’

বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা

বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা

নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ৬ জন গ্রেফতার, ড্রেজার জব্দ

নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ৬ জন গ্রেফতার, ড্রেজার জব্দ

ইরানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দুই বিচারক

ইরানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দুই বিচারক